কুয়েট উপাচার্য ও প্রোভিসির পদত্যাগ: শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে প্রশাসনিক বড় পরিবর্তন

kuet-vc-resignation-student-protest-2025

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) চলমান উত্তাল পরিস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ এবং প্রোভিসি অধ্যাপক ড. এসকে শরীফুল আলম তাদের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। বুধবার দিবাগত রাতেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তারা তাদের পদত্যাগপত্র পাঠান।

শিক্ষার্থীদের লাগাতার আন্দোলনের মুখে এ পদত্যাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামোয় একটি বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকদের মধ্য থেকে একজনকে সাময়িকভাবে উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হবে। পাশাপাশি, উপাচার্য ও প্রোভিসি নিয়োগের জন্য খুব দ্রুত একটি সার্চ কমিটি গঠনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। এর পর থেকেই অচলাবস্থার শুরু হয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর শিক্ষার্থীরা একের পর এক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামে।

বিশেষ করে ১৩ এপ্রিল থেকে অনির্দিষ্টকালের অবস্থান কর্মসূচি এবং পরে ২১ এপ্রিল শুরু হওয়া আমরণ অনশন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চাপে ফেলে দেয়। সিন্ডিকেট সভায় ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্তও পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করে তোলে।

তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মোড় আসে ২৩ এপ্রিল রাতে, যখন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙাতে সক্ষম হন। প্রায় ৫৮ ঘণ্টার আমরণ অনশন শেষে শিক্ষার্থীরা জুস পান করে আন্দোলন থেকে সরে আসেন।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সমন্বয়কারী ‘কুয়েট ১৯’ নামের একটি ফেসবুক পেজে অনশন ভাঙার পর লেখা হয়, “আলহামদুলিল্লাহ। আমরা জিতেছি। আমার ভাইরা জিতেছে। মাছুদ পদত্যাগ করেছে!”

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দায়িত্বের ভার সাময়িকভাবে একজন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। আগামী দিনে কুয়েটের শিক্ষাব্যবস্থা ও প্রশাসনিক কাঠামো কিভাবে পুনর্গঠিত হবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

এ ঘটনাকে দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছে, যেখানে শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ কণ্ঠ প্রশাসনিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে বড় ভূমিকা রেখেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *