টাইম ম্যাগাজিনের ১০০ প্রভাবশালীর তালিকায় ড. ইউনূস – এক ইতিহাসের সাক্ষী হলো বাংলাদেশ

বিশ্বখ্যাত মার্কিন সাময়িকী টাইম ম্যাগাজিন ২০২৫ সালের জন্য তাদের বহুল আলোচিত ও মর্যাদাপূর্ণ তালিকা ‘১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তি’র নাম প্রকাশ করেছে। এবার এই তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন বাংলাদেশের নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ, সমাজ সংস্কারক ও ক্ষুদ্রঋণ আন্দোলনের পথিকৃৎ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। টাইম ম্যাগাজিন তাকে ‘লিডারস’ বা ‘নেতৃত্ব’ ক্যাটাগরিতে ৬ নম্বরে স্থান দিয়েছে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে আরেকটি গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় রচনা করলো।বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের একজন প্রতিনিধিএই তালিকায় ড. ইউনূসের সঙ্গে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার, মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউডিয়া সেইনবোম এবং বিশ্বের শীর্ষ ধনী ও প্রযুক্তিপ্রতিভা ইলন মাস্ক। এমন সব বিশ্বপরিচিত নেতাদের পাশে একজন বাংলাদেশির অবস্থান শুধুই একটি ব্যতিক্রমী সম্মান নয়, বরং একটি দেশ হিসেবে আমাদের সক্ষমতা ও সম্ভাবনার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।টাইম ম্যাগাজিন কী বলেছে ইউনূসকে নিয়ে?টাইম ম্যাগাজিনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,“ড. ইউনূস এমন একজন মানুষ, যিনি শুধু আর্থিক ধারণার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেননি, বরং অর্থনীতিকে মানুষের কল্যাণের জন্য ব্যবহার করেছেন। তার গড়ে তোলা ‘গ্রামীণ ব্যাংক’ শুধু একটি ব্যাংক নয়, বরং তা হয়ে উঠেছে দরিদ্র মানুষের ক্ষমতায়নের প্রতীক।”বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে তার ক্ষুদ্রঋণ মডেলের কথা, যা আজ বিশ্বের ৭০টিরও বেশি দেশে অনুসরণ করা হয়। তিনি প্রমাণ করেছেন—মূলধারার ব্যাংকিং সেবার বাইরে থেকেও সমাজের প্রান্তিক মানুষদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি সম্ভব।গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সাহসী ভূমিকা২০২৪ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা যখন চরমে পৌঁছায় এবং ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের প্রেক্ষিতে সরকার পদত্যাগে বাধ্য হয়, তখন অনেকেই নিরব থাকলেও ড. ইউনূস ছিলেন এক ব্যতিক্রমী কণ্ঠস্বর। তিনি সাহসিকতার সঙ্গে জাতিকে আহ্বান জানান সংঘর্ষ নয়, সংলাপের পথে ফিরে যেতে।টাইম ম্যাগাজিন বলেছে –“গণতান্ত্রিক রূপান্তরের সেই সন্ধিক্ষণে তিনি কেবল একজন বুদ্ধিজীবী নন, বরং জাতীয় পথনির্দেশক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।”এই অংশটি প্রমাণ করে, তার প্রভাব কেবল অর্থনীতি বা সমাজ উন্নয়নেই সীমাবদ্ধ নয়—তিনি জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হয়ে উঠেছেন।ইউনূসের জীবনের কিছু উল্লেখযোগ্য অধ্যায়২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান তিনি ও তার গড়ে তোলা গ্রামীণ ব্যাংক।১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক আজ বিশ্বের অন্যতম সফল সামাজিক উদ্যোগ হিসেবে পরিচিত।তার মাইক্রোক্রেডিট বা ক্ষুদ্রঋণ মডেলকে অনুসরণ করে দারিদ্র্যপীড়িত বহু দেশ উন্নয়নের পথে অগ্রসর হয়েছে।তিনি বহু আন্তর্জাতিক সম্মাননা পেয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেনশিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম, কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল এবং ফ্রান্সের লিজিওন অব অনার।বাংলাদেশের জন্য এই স্বীকৃতির তাৎপর্যড. ইউনূসের এই স্বীকৃতি শুধু তার ব্যক্তিগত অর্জন নয়। এটা বাংলাদেশের জন্য এক গভীর অর্থবহ মুহূর্ত।বিশ্ব যখন বৈষম্য, দারিদ্র্য এবং অস্থিরতার মাঝে ভবিষ্যতের জন্য নতুন নেতৃত্ব খুঁজছে, তখন বাংলাদেশের একজন সন্তান বিশ্বমঞ্চে স্বীকৃত হচ্ছেন নেতৃত্বের প্রতীক হিসেবে।এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ইমেজ আরও উজ্জ্বল হয়েছে।ভাষণ বা অনুষ্ঠান উপস্থাপনার অংশপ্রিয় শ্রোতা/পাঠক,আজকের এই খবর কেবল একটি তালিকা নয়। এটি প্রমাণ করে, সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি, মানবিক চিন্তা এবং দূরদর্শিতা থাকলে একজন মানুষ – একজন বাংলাদেশি – শুধু দেশের ভেতরেই নয়, সারা বিশ্বের মানুষকে প্রভাবিত করতে পারেন।ড. ইউনূস আমাদের দেখিয়েছেন কিভাবে অর্থনীতি হতে পারে মানবকল্যাণের হাতিয়ার, কিভাবে নেতৃত্ব হতে পারে অহংকার নয়, বরং জনসেবার প্রতিশ্রুতি।আমরা গর্বিত, আমরা অনুপ্রাণিত এবং আমরা আশাবাদী – ভবিষ্যতে এমন আরও অনেক ইউনূস বাংলাদেশকে বিশ্বদরবারে নেতৃত্বের আসনে বসাবে।—সোমবার টাইমস পরিবার থেকে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন। আপনার পথচলা হোক আরও দীপ্তিময়, আপনার সাফল্য ছুঁয়ে যাক ভবিষ্যতের প্রজন্মকে।
