দিল্লিতে চারতলা ভবন ধসে মর্মান্তিক মৃত্যু ১১ জনের, এখনও উদ্ধারকাজ চলছে

দিল্লিতে চারতলা ভবন ধসে মর্মান্তিক মৃত্যু ১১ জনের, এখনও উদ্ধারকাজ চলছে

ভারতের রাজধানী দিল্লির উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মুস্তাফাবাদ এলাকায় একটি চারতলা ভবন ধসে পড়ার ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ জনে। এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১১ জন। হতাহতদের অধিকাংশই ভবনের বাসিন্দা এবং স্থানীয় শ্রমজীবী মানুষ বলে জানা গেছে।

ভবন ধসের ঘটনা ঘটে শনিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে। সরু গলির মাঝে অবস্থিত ভবনটি ধসে পড়লে মুহূর্তেই চারদিক ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা প্রথমে উদ্ধার কাজে অংশ নেন, পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় দমকল বাহিনী, পুলিশ এবং জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী (NDRF)।

নিহত ও আহতদের তথ্য

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর বরাতে জানা গেছে, শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসস্তূপ থেকে ১১ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছেন। আহতদের মধ্যে পাঁচজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, যাদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বাকি ছয়জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। নিহতদের মধ্যে কয়েকজন নারী ও শিশু রয়েছে বলেও জানা গেছে।

ধসের সম্ভাব্য কারণ

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ধসে পড়া ভবনটির একতলায় আগে একটি বড় প্রাচীর ছিল, যা সম্প্রতি ভেঙে ফেলা হয়। বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, এই প্রাচীর ভাঙার ফলে ভবনের ভারসাম্যে ব্যাঘাত ঘটে এবং মূল কাঠামো দুর্বল হয়ে যায়। শুক্রবার রাতে দিল্লিতে হালকা বৃষ্টি হয়েছিল, যা হয়তো ভবনের দুর্বল কাঠামোকে আরও নাজুক করে তোলে। এরপরেই গভীর রাতে প্রচণ্ড শব্দে পুরো ভবনটি ভেঙে পড়ে।

উদ্ধারকাজ এখনও চলছে

ঘটনার পরপরই দমকল বিভাগ, পুলিশ এবং NDRF-এর যৌথ উদ্যোগে উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। থার্মাল ক্যামেরা, জীবন রক্ষা সেন্সর এবং আধুনিক ক্রেনের সাহায্যে ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়া মানুষজনের সন্ধান করা হচ্ছে। উদ্ধারকর্মীরা আশঙ্কা করছেন, ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও কেউ আটকে থাকতে পারেন। তাই উদ্ধার কাজ অব্যাহত রয়েছে।

প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ঘটনাস্থলের পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছেন এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা এবং আহতদের চিকিৎসা ব্যয়ের দায়িত্ব নেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি।

পুরনো অবকাঠামো ও নাগরিক নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন

এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর দিল্লির পুরনো ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে আবারও প্রশ্ন উঠেছে। মুস্তাফাবাদসহ বহু ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এমন বহু ভবন রয়েছে, যেগুলো নকশাবহির্ভূতভাবে নির্মিত এবং যেগুলোর কাঠামো দীর্ঘদিন ধরে অপরীক্ষিত।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভবনের নিরাপত্তা যাচাই এবং রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে, নইলে ভবিষ্যতেও এ ধরনের প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার ঝুঁকি থেকেই যাবে।


সতর্কতা ও পদক্ষেপ:

দিল্লি মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন ইতোমধ্যেই আশপাশের আরও কিছু ভবন চিহ্নিত করে তাদের স্থায়িত্ব পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছে। নাগরিকদেরও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বসবাস না করার জন্য সতর্ক করা হয়েছে।

এদিকে মুস্তাফাবাদের বাসিন্দারা বলছেন, এ ধরনের ভবন ধসের ঘটনা তাদের জন্য নতুন নয়। তারা স্থানীয় প্রশাসনের কাছে বারবার অনুরোধ জানিয়েও সুফল পাননি। এবার তারা স্থায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও নিয়মিত তদারকির জোর দাবি তুলেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *