রাজনীতি প্রতিহিংসার শিকার – মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় জামায়াত নেতা এটিএম আজহারের আপিল শুনানি মঙ্গলবার-

atm-azharul-islam-appeal-case (1)

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের আপিল শুনানি আগামীকাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হবে। আজ সোমবার আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের একটি বেঞ্চ এ বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য করেন।

আদালতে আজহারের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার এহসান আবদুল্লাহ সিদ্দিকী ও অ্যাডভোকেট শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। শুনানিকালে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ এই গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানির দিন নির্ধারণ করেন, যা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়ায় একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে যাচ্ছে।

🔍 দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া ও রায় পুনর্বিবেচনার অনুমতি

এর আগে, ২০২৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সর্বোচ্চ আদালত এই মামলায় রিভিউ আবেদন গ্রহণ করে আপিল শুনানির অনুমতি দেন। বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে যে, মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলাগুলোর মধ্যে এটিই প্রথম, যেখানে রিভিউ আবেদন থেকে মূল আপিল শুনানির সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

আসামিপক্ষকে তখন দুই সপ্তাহের মধ্যে আপিলের সারসংক্ষেপ জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। এরপর ধারাবাহিকভাবে ২৩ ও ২৫ ফেব্রুয়ারি এবং ২০ ফেব্রুয়ারি শুনানির তারিখ ধার্য হলেও তা অনুষ্ঠিত হয়নি। আজ সেই প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত ধাপ হিসেবে মঙ্গলবার শুনানি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

atm-azharul-islam-appeal-case (1)
atm-azharul-islam-appeal-case (1)

⚖️ বিচারিক প্রেক্ষাপট

২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে এটিএম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করে। রায়ে বলা হয়, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে রংপুর অঞ্চলে গণহত্যা, হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগসহ মোট ছয়টি মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনে সরাসরি জড়িত ছিলেন তিনি।

বিশেষ করে, রংপুরে ১,২৫৬ জনকে হত্যা, ১৭ জনকে অপহরণ, একজন নারীকে ধর্ষণ, ১৩ জনকে নির্যাতন এবং বহু ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া—এই অভিযোগগুলো প্রমাণিত হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ড দেন। যদিও আসামিপক্ষ শুরু থেকেই এই রায়কে “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও প্রহসনের বিচার” হিসেবে আখ্যা দিয়ে আসছে।

২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি আজহারের পক্ষ থেকে ১১৩টি যুক্তি তুলে ধরে খালাস চেয়ে আপিল করেন তার আইনজীবীরা। এই আপিলের সঙ্গে যুক্ত ছিল ৯০ পৃষ্ঠার মূল আবেদন ও ২৩৪০ পৃষ্ঠার সংযুক্ত নথিপত্র।

🔄 রিভিউ আবেদন ও আপিল বিভাগের সিদ্ধান্ত

২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর আপিল বিভাগ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে। এই রায়ের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ১৯ জুলাই রিভিউ আবেদন করেন আজহারুল ইসলাম। এরপর ২০২৪ সালে শুরু হয় রিভিউ আবেদনের ধারাবাহিক শুনানি।

চলতি বছরের শুরুতে (২৩ ও ২৫ ফেব্রুয়ারি) রিভিউ শুনানির পর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ মূল আপিল শুনানির অনুমতি দেন, যা বিচারপ্রক্রিয়ার ধারায় এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

🔎 রাজনৈতিক ও মানবিক দৃষ্টিকোণ

বিষয়টি নিয়ে দেশে-বিদেশে মানবাধিকার সংস্থাসহ বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছে। একপক্ষ বলছে, ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মধ্য দিয়ে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী ও সমর্থকরা বলছেন, এটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অংশ। তারা এটিএম আজহারুল ইসলামকে নির্দোষ দাবি করে দ্রুত মুক্তির আহ্বান জানাচ্ছেন।

⏰ আগামীকালের শুনানি ঘিরে সতর্কতা

আগামীকালকের শুনানিকে কেন্দ্র করে সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। আদালত প্রাঙ্গণে বাড়ানো হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি।

নজর এখন আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়ের দিকে। এই রায়ের মাধ্যমে শুধু এটিএম আজহারুল ইসলামের ভাগ্য নয়, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়াও একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে পৌঁছাবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *