ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে হামলার পরিকল্পনা ফাঁস: ইসরায়েলের ইতিহাসে অন্যতম বড় গোয়েন্দা বিপর্যয় iran-and-israel-are-pushing-the-world

iran-and-israel-are-pushing-the-world

ইসরায়েলের গোপন পরিকল্পনা ফাঁস করল নিউইয়র্ক টাইমস, তোলপাড় বিশ্ব কূটনীতিতে

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালানোর পরিকল্পনা নিয়ে ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ চিন্তাভাবনা ও কৌশল ফাঁস করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রভাবশালী গণমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমস। এই ফাঁসকে ইসরায়েলের ইতিহাসের “সবচেয়ে বিপজ্জনক তথ্য ফাঁসের” একটি হিসেবে অভিহিত করেছেন দেশটির একজন জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তা।

যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় হামলার চিন্তা

নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস করতে সামরিক হামলার পরিকল্পনা করেছিল এবং এ কাজে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি সহায়তা লাভের চেষ্টা চালিয়েছিল। গত বছরের ১ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে ২০০টির বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের পর এই পরিকল্পনা সক্রিয়ভাবে বিবেচনায় আনা হয়।

সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা জানান, ইসরায়েল এককভাবে এই অভিযান পরিচালনা করতে চাইলেও মার্কিন অনুমোদন ছাড়া তারা তা বাস্তবায়ন করেননি। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ হামলার পরিকল্পনায় একটি বড় আকারের বোমা হামলা অথবা বিমান ও কমান্ডো মিশনের সমন্বিত আঘাত অন্তর্ভুক্ত ছিল। এর আগে সিরিয়ার ভূগর্ভস্থ পরমাণু স্থাপনাতেও একই রকম অভিযান চালানো হয়েছিল।

নেতানিয়াহুর ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক

ইসরায়েলি রাজনীতিতে এই রিপোর্ট ফাঁস নতুন মাত্রা যোগ করেছে। কয়েকজন প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ অভিযোগ করেছেন, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নিজেই এই তথ্য ফাঁসের পেছনে রয়েছেন। উদ্দেশ্য ছিল—ইরানের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত কড়া পদক্ষেপ না নেওয়ার অভিযোগ থেকে নিজেকে বাঁচানো।

সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী আভিগডোর লিবারম্যান তার এক্স (টুইটার) অ্যাকাউন্টে লিখেছেন,

“আমি নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত পুরো প্রতিবেদনটি পড়েছি। আমার মনে হয়, আমরা সৌভাগ্যবান যে সিরিয়া ও ইরাকে পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলার সময় নেতানিয়াহু প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না।”

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, নেতানিয়াহু তার কঠোর ইমেজ ধরে রাখতে এবং দেশের ভেতরে সমালোচনার মুখে পড়া এড়াতে ইচ্ছাকৃতভাবে বিষয়টি ফাঁস করতে পারেন।

হামলার প্রস্তুতি ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ইসরায়েলি কর্মকর্তারা মনে করেছিলেন যে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই হামলার পরিকল্পনায় অংশ নিতে পারেন। তারা তার ক্ষমতা গ্রহণের সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করছিলেন। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা এই যৌথ অভিযান নিয়ে দ্বিধায় ছিলেন এবং ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সমঝোতার পক্ষে অবস্থান নেন।

বিশ্লেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি

বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনা চলছে। ইসরায়েল বরাবরই এটিকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হিসেবে দেখে আসছে। তবে সরাসরি সামরিক অভিযান না করে কূটনৈতিক ও প্রযুক্তিগত উপায়ে ইরানকে সীমিত রাখার কৌশলেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সচেষ্ট ছিল।

ফাঁস হওয়া পরিকল্পনায় ইরানের বিরুদ্ধে যেকোনো সামরিক পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যে আরও অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে, যা বিশ্বশান্তির জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।


দ্য মানডে টাইমস মন্তব্য:
এই ধরনের তথ্য ফাঁস শুধু একটি দেশের নিরাপত্তা নয়, পুরো অঞ্চলের ভূরাজনীতি ও কূটনৈতিক পরিবেশকে নাড়িয়ে দিতে পারে। দায়িত্বশীল কূটনীতি ও স্বচ্ছতা যেখানে অপরিহার্য, সেখানে গোপন যুদ্ধপরিকল্পনা ফাঁস হওয়া এক ভয়াবহ বার্তা দেয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *