যুক্তরাষ্ট্রে ৫ ভাগ ক্যান্সারের কারণ হতে পারে CT স্ক্যান(5% of Cancers in the US May Be Caused by CT Scans)

সিটিস্ক্যান থেকেই ক্যান্সার! যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণায় চমকপ্রদ তথ্য: প্রতি ২০ জনে ১ জন রোগীর কারণ হতে পারে মেডিকেল রেডিয়েশনদ্য মানডে টাইমস বাংলা | বিজ্ঞান ও স্বাস্থ্য | লাইভ টিভি রিপোর্টযুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে ভয়াবহ ও গুরুত্বপূর্ণ একটি তথ্য—যদি সিটিস্ক্যানের বর্তমান ব্যবহারের হার অপরিবর্তিত থাকে, তাহলে প্রতি বছর নির্ণীত ক্যান্সার রোগীদের অন্তত ৫ শতাংশের মূল কারণ হতে পারে এই চিকিৎসাগত রেডিয়েশন। সহজ ভাষায় বলা যায়, প্রতি ২০ জন ক্যান্সার রোগীর মধ্যে ১ জন এই আধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহারে আক্রান্ত হচ্ছেন!গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, সানফ্রান্সিসকোর রেডিওলজিস্ট ডা. রেবেকা স্মিথ-বিন্ডম্যান। তিনি বলেন, “সিটিস্ক্যান নিশ্চিতভাবেই জীবন বাঁচাতে সক্ষম, কিন্তু এর ঝুঁকি নিয়ে আমরা যথেষ্ট সচেতন নই। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ অনিবার্যভাবেই এই পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, যার ফলে তাদের শরীরে অত্যন্ত ক্ষতিকর আয়নাইজিং রেডিয়েশনের সংস্পর্শ ঘটছে।”—সিটিস্ক্যান কীভাবে কাজ করে?সিটিস্ক্যান (Computed Tomography বা CT scan) এক ধরনের এক্স-রে প্রযুক্তি যেখানে শরীরের বিভিন্ন অংশের শত শত ছবি নিয়ে ত্রিমাত্রিক চিত্র তৈরি করা হয়। এটি চিকিৎসকদের জন্য হাড়, মাংসপেশি, রক্তনালি ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের অবস্থা জানতে অত্যন্ত কার্যকর একটি উপায়।তবে এই প্রক্রিয়ায় শরীর এক ধরনের শক্তিশালী রশ্মির—আয়নাইজিং রেডিয়েশনের—সামনে আসে, যা কোষের ভেতরকার গঠনকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এই ক্ষতি দীর্ঘ মেয়াদে ডিএনএ মিউটেশন ও ক্যান্সারের সৃষ্টি করতে পারে।—এমআরআই ও সিটিস্ক্যান—দুই যন্ত্র, দুই বিপরীত ফলাফলঅনেক সময় সিটিস্ক্যান ও এমআরআই একে অপরের বিকল্প হিসেবে ভাবা হয়, কারণ দেখতে এদের যন্ত্রপাতি প্রায় একই রকম। তবে কার্যপ্রণালী ভিন্ন।এমআরআই (Magnetic Resonance Imaging) ব্যবহার করে চৌম্বক শক্তি ও রেডিও তরঙ্গ, যার ফলে শরীরে কোনো ধরনের ক্ষতিকর রশ্মি প্রয়োগ হয় না।অন্যদিকে, সিটিস্ক্যানে ব্যবহৃত এক্স-রে তরঙ্গ খুবই শক্তিশালী ও শরীরের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে, যদি নিয়ম মেনে না করা হয়।—রেডিয়েশনের গোপন বিপদরেডিয়েশন দুই ধরনের—নন-আয়নাইজিং (যেমন রেডিও তরঙ্গ, ইনফ্রারেড, মাইক্রোওয়েভ) এবং আয়নাইজিং (যেমন এক্স-রে, গামা রশ্মি, ইউভি)।এই আয়নাইজিং রশ্মিই বেশি ক্ষতিকর কারণ এটি কোষের ডিএনএ ভেঙে ফেলতে পারে। এর ফলাফল হতে পারে কোষের অস্বাভাবিক বিভাজন, যা ক্যান্সারে রূপ নিতে পারে।—কী করা উচিত এখন?গবেষকরা বলছেন, সিটিস্ক্যান যেন শুধুমাত্র অতি প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়, তা নিশ্চিত করা জরুরি। অনেক সময় অপ্রয়োজনীয় সিটিস্ক্যান করা হয় রোগীর চাপে বা দ্রুত রোগ নির্ণয়ের তাগিদে—এই প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।চিকিৎসকদের উচিত বিকল্প পদ্ধতি যেমন এমআরআই, আলট্রাসাউন্ড অথবা কম রেডিয়েশনযুক্ত ইমেজিং প্রযুক্তির কথা বিবেচনা করা। পাশাপাশি রোগীদেরও এই বিষয় নিয়ে সচেতন হওয়া উচিত এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের কাছে বিকল্প জানতে চাওয়া উচিত।—শেষ কথাসিটিস্ক্যান চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক আশীর্বাদ, তবে এর যথেচ্ছ ব্যবহারে আশীর্বাদই অভিশাপে রূপ নিতে পারে। জীবন বাঁচাতে প্রযুক্তির উপর নির্ভর করতেই হবে, কিন্তু সেই নির্ভরতাকে হতে হবে সুপরিকল্পিত ও নিরাপদ।চিকিৎসা যেন রোগের জন্ম না দেয়, সে দায়িত্ব আমাদেরই। সচেতন হোন, সুস্থ থাকুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *