ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক: কৌশলগত বাস্তবতা ও আঞ্চলিক ভারসাম্য

আফগানিস্তানে তালেবানের পুনঃউত্থান দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন মাত্রা এনেছে। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র, উভয় দেশই এখন তালেবানের সঙ্গে সীমিত ও বাস্তববাদী সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে, যা তাদের আঞ্চলিক স্বার্থ রক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়ক হতে পারে।
ভারত: চীন ও পাকিস্তানের প্রভাব মোকাবেলায় কৌশলগত সংযোগ
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি এবং আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির মধ্যে দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকটি তালেবানের সঙ্গে ভারতের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সংলাপ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এই বৈঠকে চাবাহার বন্দর ব্যবহার করে আফগানিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্যিক সংযোগ বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, যা পাকিস্তানের করাচি ও গওয়াদার বন্দরের উপর নির্ভরতা কমাতে সাহায্য করবে।
তালেবান ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে “গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক ও অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব” হিসেবে অভিহিত করেছে। ভারত, যদিও তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি, তবুও কাবুলে একটি কারিগরি মিশন পরিচালনা করছে এবং স্বাস্থ্য ও শরণার্থী পুনর্বাসনে সহায়তা প্রদান করছে।
যুক্তরাষ্ট্র: সন্ত্রাসবাদ দমন ও কৌশলগত ভারসাম্য
যুক্তরাষ্ট্র ২০২৫ সালে তালেবানের শীর্ষ নেতাদের উপর থেকে পুরস্কার ঘোষণা প্রত্যাহার করেছে, যার মধ্যে সিরাজউদ্দিন হাক্কানিও রয়েছেন। এই পদক্ষেপটি তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার একটি ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে, যদিও মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে উদ্বেগ রয়ে গেছে।
আইএস-খোরাসান প্রদেশ (IS-K) এর মতো চরমপন্থী গোষ্ঠীর উত্থান যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নতুন নিরাপত্তা হুমকি সৃষ্টি করেছে। তালেবান, যদিও আদর্শগতভাবে ভিন্ন, IS-K এর বিস্তার রোধে আগ্রহী, যা সন্ত্রাসবাদ দমনে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরোক্ষ সহযোগিতার সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে।

চীন ও রাশিয়া: আফগানিস্তানে প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা
চীন ইতোমধ্যে তালেবানের সঙ্গে ২৫ বছরের তেল উত্তোলন চুক্তি স্বাক্ষর করেছে এবং আফগানিস্তানকে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (BRI) এর অন্তর্ভুক্ত করার আলোচনা চালাচ্ছে। রাশিয়াও তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করছে। এই প্রেক্ষাপটে, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আফগানিস্তানে কৌশলগত ভারসাম্য বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
বাস্তববাদ বনাম নৈতিকতা: কৌশলগত সিদ্ধান্তের চ্যালেঞ্জ
তালেবান সরকার এখনো নারীদের অধিকার হরণ, শিক্ষা নিষেধাজ্ঞা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য সমালোচিত। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা একটি নৈতিক চ্যালেঞ্জ। তবে, আঞ্চলিক নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদ দমন এবং চীন-পাকিস্তানের প্রভাব মোকাবেলায় এই সম্পর্ক বাস্তববাদী কৌশল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
আফগানিস্তানে তালেবানের শাসন বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র, উভয় দেশই তাদের আঞ্চলিক স্বার্থ রক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তালেবানের সঙ্গে সীমিত ও বাস্তববাদী সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে। এই সম্পর্ক গড়ে তোলার সময় নৈতিকতা ও বাস্তবতার মধ্যে সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখা হবে ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।