নির্বাচনের পূর্বশর্ত হিসেবে খুনিদের বিচার ও রাজনৈতিক সংস্কার দাবি জামায়াত আমীরের

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান আজ লালমনিরহাটে আয়োজিত এক বিশাল জনসভায় বলেন, “গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হলে এবং একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আগে এই দেশের মানুষকে হত্যাকারী ও গুমকারী ব্যক্তিদের দৃশ্যমান বিচার নিশ্চিত করতে হবে। এর পাশাপাশি প্রয়োজন রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কাঠামোর আমূল সংস্কার।”
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “গত ১৫ বছর ধরে এ দেশে হত্যা, গুম, নির্যাতন, দমন-পীড়নের মাধ্যমে একটি জালিম সরকার জনগণের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে তারা শুধু বিরোধী মতকে দমন করেনি, সাধারণ মানুষকেও নিরাপত্তাহীনতার মাঝে রেখেছে।” তিনি আরও বলেন, “এই সরকারের শাসনামলে যারা রাষ্ট্রের পক্ষে অপরাধ করেছে, তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি আনতে হবে, নতুবা কখনোই একটি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।”
তিনি জাতির প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “এই অন্ধকার থেকে আলোর দিকে যেতে হলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দেশ আজ এক ক্রান্তিকালে পৌঁছেছে। এখনই সময় ন্যায়, মানবতা ও নৈতিকতার পক্ষে দাঁড়ানোর।”
দেশ গঠনে জামায়াতের রূপরেখা
বক্তৃতায় ডা. শফিকুর রহমান একটি বিকল্প রাষ্ট্র কাঠামোর রূপরেখা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই, যেখানে বিচারব্যবস্থা স্বাধীন, প্রশাসন জবাবদিহিতামূলক এবং নাগরিক অধিকার সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত থাকবে।”
নারীদের মর্যাদা ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বলেন, “নারী হলো জাতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাদের প্রতি সুবিচার না করলে কোনো দেশ উন্নতি করতে পারে না। আমরা নারীদের জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ, শিক্ষা ও চিকিৎসা নিশ্চিত করব।”
তিনি আরও বলেন, “বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা ভিন্নমতকে দমন করে। আমরা একটি নৈতিক, আধুনিক ও দক্ষতা ভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই, যা শুধু ডিগ্রি নয়, জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও মূল্যবোধ দেবে।”
সংখ্যালঘু নিরাপত্তা ও ধর্মীয় সহাবস্থান
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে জামায়াত আমীর বলেন, “আমাদের আমলে একটিও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়নি। এটা আমাদের বড় অর্জন। আমরা বিশ্বাস করি, ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার। সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষের নিরাপত্তা, অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে আমরা বদ্ধপরিকর।”
তিনি বলেন, “আমরা এমন একটি সমাজ চাই, যেখানে কেউ ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে অবহেলিত হবে না। বরং সবাই মিলে একটি ইনসাফভিত্তিক সমাজ গড়বে।”
দুর্নীতি ও বৈষম্যহীন অর্থনীতি গড়ার অঙ্গীকার
জামায়াত আমীর তার বক্তব্যে দেশে চলমান দুর্নীতির মহোৎসবের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “বর্তমান সরকার দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। লুটপাট, ঋণখেলাপি ও পাচারকারীরা আজ ক্ষমতার অংশ। অথচ দেশের কৃষক, শ্রমিক ও গরিব মানুষ দিনদিন পিছিয়ে পড়ছে।”
তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, “আমরা একটি বৈষম্যহীন অর্থনীতি গড়ে তুলতে চাই। কৃষকদের তাদের ন্যায্য দাম, শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি এবং ব্যবসায়ীদের উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করব। দেশের সম্পদ জনগণের কল্যাণে ব্যবহৃত হবে, দুর্নীতিবাজদের পকেটে নয়।”
