নাহিদ ইসলাম: একটি দলকে সরিয়ে আরেকটি দলকে বসানোর জন্য গণ-অভ্যুত্থান হয়নি — গণতান্ত্রিক সংস্কারের আহ্বান এনসিপির

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থান ছিল না কোনো রাজনৈতিক দলকে সরিয়ে আরেকটি দলকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য। বরং এটি ছিল একটি মৌলিক ও গঠনমূলক পরিবর্তনের দাবিতে জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন।
শনিবার সকালে সংসদ ভবনের এলডি হলে অনুষ্ঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে সূচনা বক্তব্যে নাহিদ এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “আমরা এমন একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার জন্য কাজ করতে চাই, যেখানে জনগণের অধিকার সংরক্ষিত থাকবে, মৌলিক অধিকার খর্ব হবে না, এবং স্বৈরতন্ত্র কিংবা ফ্যাসিবাদ ফিরে আসার আর কোনো সুযোগ থাকবে না।”
গণতন্ত্র ও সংস্কারের উপর জোর
নাহিদ ইসলাম বলেন, “গণ-অভ্যুত্থান কোনো দলের পক্ষে বা বিপক্ষে নয়। এটি ছিল জনগণের পক্ষে, জনগণের শক্তির প্রতিফলন। আমরা চাই একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, জবাবদিহিমূলক ও মানবিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা, যেখানে সকল নাগরিক সমান মর্যাদা পাবে।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের সংবিধান, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা, বিচার ব্যবস্থা ও নির্বাচন ব্যবস্থার উপর এনসিপি বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। এসব বিষয়ে মৌলিক সংস্কার ছাড়া একটি টেকসই গণতন্ত্র গঠন সম্ভব নয়।”
জুলাই সনদের গুরুত্ব
নাহিদ ইসলাম বৈঠকে আরও বলেন, “জুলাই সনদ জাতির সামনে তুলে ধরা প্রয়োজন। এটি আমাদের নৈতিক অঙ্গীকার। আমরা বিশ্বাস করি, এই সনদ বাস্তবায়নের মাধ্যমেই রাষ্ট্রকে একটি গণতান্ত্রিক, মানবিক ও অংশগ্রহণমূলক পথে পরিচালিত করা সম্ভব। এটি শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর নয়, বরং নাগরিক সমাজ, তরুণ প্রজন্ম এবং সকল স্তরের মানুষের প্রতিও দায়িত্ব।”
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, সংস্কারের অভাবে যদি রাষ্ট্র ব্যবস্থায় অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়, তাহলে ফ্যাসিবাদ কিংবা একনায়কতন্ত্র আবার ফিরে আসতে পারে। “আমরা সেই সম্ভাবনার সব দরজা বন্ধ করতে চাই। এজন্যই সাংবিধানিক ও কাঠামোগত পরিবর্তন এখন সময়ের দাবি,” বলেন নাহিদ।
এনসিপির প্রতিনিধি দল
বৈঠকে নাহিদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন এনসিপির গুরুত্বপূর্ণ নেতৃবৃন্দ। তাদের মধ্যে ছিলেন:
- সদস্য সচিব আখতার হোসেন
- মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী
- যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষার
- মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ
- জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন
- আরও দুইজন কেন্দ্রীয় সদস্য
এই প্রতিনিধি দল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করে ভবিষ্যতের রাজনৈতিক রূপরেখা ও সাংবিধানিক সংস্কারের বিষয়ে মত বিনিময় করে।
প্রেক্ষাপট: গণ-অভ্যুত্থান ও রাজনৈতিক আলোচনা
২০২৪ সালে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটে যাওয়া গণ-আন্দোলন ও রাজনৈতিক অস্থিরতা দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে বড় ভূমিকা রাখে। সরকারের নীতির বিরুদ্ধে, নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন, রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষ রাজপথে নামেন। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমান জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উদ্যোগে বিভিন্ন দল ও সংগঠনের সঙ্গে সংলাপ চলছে।
এর আগে ১৭ এপ্রিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।
