মালয়েশিয়ায় শি জিনপিংয়ের বার্তা: চীন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে আরও নির্ভরযোগ্য অংশীদার


কুয়ালালামপুর, মালয়েশিয়া – মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ ও ট্রাম্প প্রশাসনের উচ্চ ট্যারিফ নীতির প্রেক্ষাপটে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সফরে মালয়েশিয়ায় এসে পৌঁছেছেন। সফরের মূল বার্তা পরিষ্কার: “যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় চীনই হচ্ছে আরও ভালো ও দীর্ঘস্থায়ী বাণিজ্যিক অংশীদার।”
২০২৫ সালের ১৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় শি জিনপিং কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। এটি তার ২০১৩ সালের পর মালয়েশিয়ার প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর। এর আগে তিনি ভিয়েতনামে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি সম্পাদন করেন, যার মধ্যে রয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রেল উন্নয়ন, এবং প্রযুক্তি খাতে সহযোগিতা।
মালয়েশিয়ায় পৌঁছে শি বলেন, “উচ্চপর্যায়ের কৌশলগত অংশীদারিত্ব কেবল চীন ও মালয়েশিয়ার জন্যই নয়, পুরো অঞ্চল এবং বিশ্বের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির জন্যও উপকারী।” – বারনামার সূত্র অনুযায়ী।
🌐 চীনের লক্ষ্য: মার্কিন প্রভাবের বিকল্প তৈরি
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শি জিনপিংয়ের এই সফর আসলে যুক্তরাষ্ট্রের পরিবর্তে চীনকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বিকল্প অংশীদার হিসেবে তুলে ধরার প্রচেষ্টা। ট্রাম্প প্রশাসনের উচ্চ হারে আমদানি শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশকে ক্ষুব্ধ করেছে। মালয়েশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্র ২৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, যা মালয়েশিয়া প্রত্যাখ্যান করেছে।
অস্ট্রেলিয়ার তাসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এশিয়ান স্টাডিজের অধ্যাপক জেমস চিন বলেন, “চীন একটি বিকল্প আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাইছে, যেখানে মার্কিন ডলারের পরিবর্তে চীনা মুদ্রা ‘রেনমিনবি’ ব্যবহার করা হবে।”

🇲🇾 মালয়েশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ
চীন ২০০৯ সাল থেকে মালয়েশিয়ার সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। ২০২৪ সালে চীন-মালয়েশিয়া বাণিজ্যের পরিমাণ দাঁড়ায় ২১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে।
মালয়েশিয়ার সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ নাজরি আব্দুল আজিজ বলেন, “চীনের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীল সম্পর্ক রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের নেতৃত্বে মালয়েশিয়া এখন আরও ঘনিষ্ঠভাবে চীনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। এটা আমাদের জন্য ভালো।”
চীনা প্রেসিডেন্ট তার তিন দিনের সফরে মালয়েশিয়ার রাজা সুলতান ইব্রাহিম ইবনি ইস্কান্দার এবং প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এবং রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে অংশ নেবেন।
🌏 চীন-পন্থী আঞ্চলিক কৌশল
শি জিনপিং মালয়েশিয়াকে আঞ্চলিক কৌশলগত দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন। মালয়েশিয়া বর্তমানে আসিয়ান (ASEAN) জোটের চেয়ারম্যান দেশ এবং তার অবস্থান দক্ষিণ চীন সাগরের কেন্দ্রে, যেখানে চীনের সাথে কয়েকটি দেশের সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ রয়েছে।
এদিকে, বিশ্লেষক আলফ্রেড মুলুয়ান উ বলেন, “চীন মালয়েশিয়াকে তাদের ঐতিহ্যগত প্রভাববলয়ের অংশ মনে করে। অর্থনৈতিক এবং কূটনৈতিক উভয় সম্পর্কই তারা আরও গভীর করতে চায়।”

শি জিনপিংয়ের এই সফর কেবলমাত্র কূটনৈতিক নয়, বরং অর্থনৈতিক ও ভৌগোলিক রাজনীতির জটিল মোড়কে চীন তার অবস্থান দৃঢ় করার একটি কৌশলী পদক্ষেপ। মালয়েশিয়াও এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করছে—বিশেষ করে প্রযুক্তি, বিনিয়োগ ও বাজার প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রে।