বিশ্বমঞ্চে সাফল্যের খোঁজে: বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ক্রীড়াবিদদের সম্পৃক্ত করতে উদ্যোগী জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ

স্পোর্টস ডেস্ক | ঢাকা:
বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে নতুন যুগের সূচনা হতে যাচ্ছে। এবার প্রবাসী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রতিভাবান ক্রীড়াবিদদের দেশের প্রতিনিধিত্ব করাতে সক্রিয় পদক্ষেপ নিচ্ছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (NSC)। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাফল্য পাওয়া খেলোয়াড়দের দেশে ফিরিয়ে এনে বাংলাদেশ জাতীয় দলে অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে চিঠি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
সংশ্লিষ্ট ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের কাছে প্রেরিত এই নির্দেশনাপত্রে বলা হয়েছে—”স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কৃতি খেলোয়াড়গণকে বাংলাদেশ জাতীয় দলে অন্তর্ভুক্ত করার সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণ” করা হবে।
🌍 বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা সম্ভাবনা
বর্তমানে ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যসহ নানা দেশে বসবাসরত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ক্রীড়াবিদরা ফুটবল, জিমন্যাস্টিকস, অ্যাথলেটিকস, ক্রিকেট ও অন্যান্য খেলায় দারুণ সাফল্য পাচ্ছেন। অথচ তাদের অনেকে কখনোই বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেননি—এই অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতেই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের এই ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ।

NSC-এর সচিব মোঃ আমিনুল ইসলাম, এনডিসি স্বাক্ষরিত চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে, খেলোয়াড়দের নাগরিকত্ব, জন্মনিবন্ধন, বাবা-মায়ের কাগজপত্রসহ যাবতীয় প্রশাসনিক সহায়তা প্রদানে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সরাসরি সহায়তা করতে আগ্রহী। এতে করে প্রক্রিয়াটি আরও সহজ ও ফলপ্রসূ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
⚽ ফুটবলে নজির: হামজা চৌধুরী ও জামাল ভূঁইয়ার পথচলা
বাংলাদেশ ফুটবলের ক্ষেত্রে প্রবাসীদের সম্পৃক্ততার সফল উদাহরণ হলেন হামজা দেওয়ান চৌধুরী। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা এই মিডফিল্ডার সম্প্রতি বাংলাদেশের হয়ে খেলছেন। তার আগমনেই বদলে গেছে জাতীয় দলের পারফরম্যান্স ও ফুটবল ঘিরে উদ্দীপনা।
তাঁর পথ ধরেই কানাডা জাতীয় দলের সাবেক খেলোয়াড় সামিত সোম ইতোমধ্যে বাংলাদেশ দলের হয়ে খেলার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তার অন্তর্ভুক্তি হলে দলে মধ্যমাঠে অভিজ্ঞতা ও কৌশলের গভীরতা বাড়বে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
আরও আগে ২০১৩ সালে ডেনমার্ক প্রবাসী জামাল ভূঁইয়া জাতীয় দলে যুক্ত হয়ে বদলে দিয়েছেন বাংলাদেশ ফুটবলের চেহারা। অধিনায়ক হিসেবে তিনি দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন বহু বছর। তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে দলে এসেছেন তারিক কাজী, রাহবার ও কাজেম শাহ।
🏆 সুযোগ শুধু ফুটবলে নয়
এই উদ্যোগ শুধুমাত্র ফুটবল নয়, বরং অন্যান্য খেলাতেও একইরকম সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে পারে। যেমন, জিমন্যাস্টিকসে আমেরিকান-বাংলাদেশি জ্যাক আশিকুল ইসলাম ইতোমধ্যে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নজরে এসেছেন। তার বাংলাদেশি পাসপোর্ট প্রদান প্রক্রিয়াও এগিয়ে চলেছে NSC-এর সহায়তায়।
🏅 NSC-এর লক্ষ্য: আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শক্ত অবস্থান
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ মনে করে, ফেডারেশনগুলো যদি এই নির্দেশনাকে গুরুত্বের সঙ্গে অনুসরণ করে, তাহলে বাংলাদেশ ক্রীড়াঙ্গনে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দৃঢ় অবস্থান তৈরি করতে পারবে। শুধু তা-ই নয়, অভ্যন্তরীণ প্রতিযোগিতায়ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়বে, বাড়বে প্রতিভা চর্চার ক্ষেত্র।
🔍 সারসংক্ষেপে উদ্যোগের দিকনির্দেশনা:
বিষয় | বিবরণ |
---|---|
উদ্যোগ | প্রবাসী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ক্রীড়াবিদদের জাতীয় দলে অন্তর্ভুক্তি |
সংগঠন | জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (NSC) |
সমর্থন | যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা ও সরকারের প্রশাসনিক সহায়তা |
উদাহরণ | হামজা চৌধুরী, জামাল ভূঁইয়া, সামিত সোম, জ্যাক আশিকুল ইসলাম |
প্রক্রিয়া | পাসপোর্ট, জন্মনিবন্ধন, কাগজপত্র হালনাগাদ, আনুষ্ঠানিক অনুমোদন |
সম্ভাবনা | আন্তর্জাতিক সফলতা, দলীয় মান বৃদ্ধি, খেলাধুলায় পেশাদারিত্ব |

✍️ সম্পাদকীয় মন্তব্য:
এই উদ্যোগ শুধু খেলোয়াড় সংগ্রহ নয়—এটি এক ধরনের ক্রীড়াবান্ধব কূটনীতি। যেখানে প্রতিভা, দেশপ্রেম ও পরিচয়ের সম্মিলন ঘটানো হচ্ছে একটি বৃহৎ লক্ষ্যের দিকে। বিদেশের মাটিতে বেড়ে ওঠা, কিন্তু হৃদয়ে বাংলাদেশকে ধারণ করা এই খেলোয়াড়দের কাছে এখন দেশের পতাকা তুলে ধরার সুযোগ। সময় এসেছে এই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার।