প্রস্তাবিত বাজেট কমছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ব্যয় নির্ধারণ ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা

বিশেষ প্রতিবেদক, ঢাকা:
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য জাতীয় বাজেটের আকার কমিয়ে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করতে যাচ্ছে সরকার। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মূল বাজেটের আকার ছিল ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ, এবার বাজেটের আকার কমছে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা, যা দেশের স্বাধীনতার পর এই প্রথমবারের মতো ঘটছে।

🔍 কেন বাজেট কমানো হচ্ছে?

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কয়েকটি মূল কারণের ভিত্তিতে বাজেটের আকার কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে—

  1. রাজস্ব আহরণে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি না হওয়া
  2. বৈদেশিক ঋণ ও অনুদানের প্রবাহ হ্রাস পাওয়া
  3. বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) থেকে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বাদ দেওয়া
  4. চড়া সুদের কারণে অভ্যন্তরীণ ঋণ নিরুৎসাহিত করা

🏗️ উন্নয়ন খাতে বাজেট কম

আগামী অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, যেখানে চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ, উন্নয়ন খাতে ব্যয় কমানো হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা।

মন্ত্রণালয় জানায়, বেশিরভাগ মেগা প্রকল্প ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে এবং বর্তমান সরকার নতুন মেগা প্রকল্প গ্রহণ না করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে প্রকল্পের সংখ্যা এবং খরচ—দুটোই কমছে।

💰 রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা আরও বাড়ছে

বাজেটের আকার কমলেও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) জন্য রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ৫ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। চলতি বছরের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা, যদিও সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে প্রায় ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা করা হয়।

এনবিআরের প্রস্তাব ছিল ৫ লাখের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার, তবে অর্থ বিভাগ তাদের উপর আরও চাপ দিয়েছে উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে।

📉 বাজেট ঘাটতি ও অর্থায়ন পরিকল্পনা

নতুন বাজেটে ঘাটতি প্রাক্কলন করা হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা। এই ঘাটতির একটি বড় অংশ বিদেশি উৎস থেকে এবং বাকি অংশ ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে মেটানো হবে। অভ্যন্তরীণ ঋণের ওপর নির্ভরতা কমাতেই এই কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে।

📊 প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা

আগামী অর্থবছরের জন্য অর্থ বিভাগ যে পূর্বাভাস দিচ্ছে তা হলো—

  • জিডিপি প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা: ৫.৫%
  • মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রা: ৬.৫%

তবে চলতি বছর সংশোধিত বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে মাত্র ৫.২৫%, এবং মূল্যস্ফীতি ৮.৫% পর্যন্ত পৌঁছানোর আশঙ্কা করা হয়েছে।


এবারের বাজেট ‘বাস্তবায়নযোগ্য’ করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বাজেটের আকার ছোট হলেও সুষ্ঠু ব্যয়ের মাধ্যমে কার্যকরী অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে তোলাই সরকারের লক্ষ্য। তবে উচ্চ রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা, মূল্যস্ফীতির চাপ এবং বৈদেশিক সহায়তা কমে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে এই বাজেট কতটা কার্যকর হবে—তা নির্ভর করবে বাস্তবায়নের ওপর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *