প্রবাসী আয়ে আশার আলো: এপ্রিলের ১২ দিনেই সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকার রেমিট্যান্স দেশে


বিশেষ প্রতিবেদক | ঢাকা:
বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান ভিত্তি রেমিট্যান্স খাতে এসেছে বড়সড় সুখবর। চলতি এপ্রিল মাসের প্রথম ১২ দিনেই প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশে পাঠিয়েছেন প্রায় ১.০৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে।
📊 কোথা থেকে আসছে এই রেমিট্যান্স?
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এপ্রিলের প্রথম ১২ দিনে—
- রাষ্ট্রায়ত্ত ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৪৫৯.৭২ মিলিয়ন ডলার
- বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৫৯০.৩৪ মিলিয়ন ডলার
এই সময় গড়ে প্রতিদিন ৮৭.৬৯ মিলিয়ন ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
📈 মার্চ মাসে রেমিট্যান্সে রেকর্ড
রেমিট্যান্স প্রবাহে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে ২০২৪ সালের মার্চ মাস, যেটিকে ইতিহাসে অন্যতম সেরা মাস হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
- মার্চে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ৩.২৯ বিলিয়ন ডলার
- বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৪০ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা
- গড়ে প্রতিদিন এসেছে প্রায় ১১ কোটি ডলার—যা পূর্বের যেকোনো সময়কে ছাড়িয়ে গেছে
🚀 কেন বাড়ছে রেমিট্যান্স?
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রেমিট্যান্স বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ—
- নতুন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর অর্থপাচার হ্রাস পেয়েছে
- হুন্ডি কারবারিদের দৌরাত্ম্য কমে এসেছে
- ব্যাংকে ডলারের মূল্য এখন খোলাবাজারের প্রায় সমান, ফলে প্রবাসীরা বৈধ পথে অর্থ পাঠাতে আগ্রহী হচ্ছেন
- ডিজিটাল ব্যাংকিং ও রেমিট্যান্স চ্যানেলের উন্নয়নও বড় ভূমিকা রাখছে
📅 চলতি অর্থবছরের রেমিট্যান্স চিত্র
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৯০০ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের (২০২৩-২৪) একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৪০০ কোটি ডলার বেশি।
- গত অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ১ হাজার ৪৯৪ কোটি ডলার
এটা দেখায় যে, সরকারের বিভিন্ন নীতি ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে প্রবাসী আয়ের ওপর।
🔍 অর্থনীতিতে প্রভাব
রেমিট্যান্স বাড়লে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে স্বস্তি আসে, টাকার মান স্থিতিশীল থাকে এবং আমদানি ব্যয় মেটানো সহজ হয়। রপ্তানি খাত চাপের মুখে থাকলেও প্রবাসী আয়ের এই ধারা বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যেতে সহায়তা করছে।

প্রবাসীদের পাঠানো বৈধ অর্থ দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার বড় চালিকা শক্তি। রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি নিঃসন্দেহে সরকার, ব্যাংক খাত এবং প্রবাসীদের সম্মিলিত সাফল্য। ধারাবাহিকভাবে এই প্রবাহ বজায় রাখতে হলে হুন্ডির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা, ব্যাংকিং চ্যানেলের ডিজিটালাইজেশন এবং প্রবাসীদের উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম আরও জোরালো করতে হবে।