তুরস্কে রাজনীতির রোষানলে টিভি তারকারা: ইমামোগলুর গ্রেপ্তারের পর শিল্পী সমাজে দমন-পীড়ন সংবাদদাতা:

তুরস্কে রাজনীতির রোষানলে টিভি তারকারা: ইমামোগলুর গ্রেপ্তারের পর শিল্পী সমাজে দমন-পীড়ন

সংবাদদাতা: দ্য মান্ডে টাইমস বিডি | সত্যের পাশে

ইস্তানবুল, এপ্রিল ১৬, ২০২৫ — তুরস্কে রাজনৈতিক উত্তেজনার নতুন ঢেউ এবার আঘাত হেনেছে বিনোদন জগতে। ইস্তানবুলের মেয়র ও রাষ্ট্রপতি রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী একরেম ইমামোগলুর ১৯ মার্চ গ্রেপ্তারের পর শুরু হওয়া বয়কট আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার কারণে একাধিক জনপ্রিয় অভিনেতা-অভিনেত্রী চাকরি হারিয়েছেন।

শিল্পীদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন

জনপ্রিয় অভিনেত্রী আয়বুকে পুসাত, ফুরকান আন্দিচ এবং বোরণ কুজুম—যারা রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার সংস্থা TRT-তে কাজ করতেন—তাদের বয়কট আন্দোলনের প্রতি সমর্থনের কারণে বরখাস্ত করা হয়েছে। অভিনেত্রী বাসাক গুমুলচিনেলিওগলু তার সহকর্মীদের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার পর একই পরিণতির শিকার হন। এছাড়া, অভিনেতা সেম ইয়িগিত উজুমওগলু বয়কট আন্দোলনের সমর্থনে প্রকাশ্যে কথা বলার কারণে আটক হন, যদিও পরে তাকে মুক্তি দেওয়া হয় ,

সোশ্যাল মিডিয়া ও মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ

বয়কট আন্দোলনের সমর্থনে সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় ছিলেন অভিনেতা রোজদা দেমিরার ও আলিকান ইউসেসয়। তবে, তাদের এক্স (X) অ্যাকাউন্ট আদালতের আদেশে তুরস্কে ব্লক করে দেওয়া হয়েছে । একইসাথে, সরকারের সমালোচনামূলক প্রতিবেদন প্রচারের কারণে প্রো-অপোজিশন টিভি চ্যানেল সোজকু টিভিকে ১০ দিনের সম্প্রচার নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে ।

অভিনয়শিল্পী ইউনিয়নের প্রতিক্রিয়া

তুর্কি অভিনয়শিল্পী ইউনিয়ন এই দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে। তারা বলেছে, “শিল্পে যেভাবে রাজনৈতিক চাপ বাড়ছে, তা উদ্বেগজনক। এটি মূলত সেন্সরশিপের মাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে, যা গণতান্ত্রিক নীতির পরিপন্থী।” তারা আরও উল্লেখ করেছে, “TRT রাষ্ট্রীয় অর্থে পরিচালিত হলেও, সরকারবিরোধী মনোভাবের কারণে শিল্পীদের ছাঁটাই করা হচ্ছে, যা সংবিধানে থাকা মত প্রকাশের অধিকারের লঙ্ঘন।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতামত

রাজনৈতিক বিশ্লেষক বার্ক এসেন বলেন, “২৩ বছরের একেপি শাসনের পরেও তরুণ শিল্পীরা সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে সাহস দেখাচ্ছে, এটি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক ইঙ্গিত।” তিনি আরও বলেন, “এরা কোনো দলের সরাসরি কর্মী নন, বরং নতুন প্রজন্মের স্বাধীন চিন্তাশীল মানুষ।”

বয়কট আন্দোলনের প্রভাব

এই আন্দোলনে সরকারের ঘনিষ্ঠ প্রতিষ্ঠান, মিডিয়া চ্যানেল এবং এমনকি নির্দিষ্ট কিছু ক্যাফে চেইন বয়কটের আহ্বান জানানো হয়েছে। ফলে সরকার এই প্রচারকে “জাতীয় অর্থনীতির ক্ষতি” বলে দাবি করছে। তবে, আন্দোলনকারীরা বলছেন, এটি একটি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ, যা সংবিধানে স্বীকৃত।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

ইস্তানবুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুর গ্রেপ্তারের পর তুরস্কজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে ৫৫টিরও বেশি প্রদেশে এই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে এবং ১,১০০ জনেরও বেশি মানুষকে আটক করা হয়েছে । ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এই গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়েছে এবং তুরস্কে গণতন্ত্রের অবনতির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

তুরস্কে বর্তমানে একটি সংকটময় সময় চলছে, যেখানে রাজনীতি, মিডিয়া এবং শিল্প জগত একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। শিল্পীদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার সীমাবদ্ধতা দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এই পরিস্থিতিতে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি তুরস্কের দিকে নিবদ্ধ, এবং দেশটির ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক ও সামাজিক গতিপথ নির্ধারণে এই ঘটনাগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

— দ্য মান্ডে টাইমস বিডি | সত্যের পাশে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *